প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায়ন ছাড়া সমাজে নারীর
অবস্থান উন্নত হবে না এবং
যেকোনো সংঘাত ও দুর্যোগের সময়
তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।
তিনি
বলেন, ‘এটা প্রশ্নাতীত যে
নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, বিশেষ করে
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তারা বিভিন্ন ধরনের
সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক
চাহিদার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার। যেকোন সংঘাত ও দুর্যোগের সময়
তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী
আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি
মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ
যৌথভাবে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক
নারী শান্তি ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস
সেমিনার-২০২২-এর উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি
বলেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সমস্যা
সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১,৩২৫ নাস্বার
প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে যা নারীর শান্তি
ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব প্রণয়নে
অংশ নিতে পেরে গর্বিত।
শেখ
হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ
জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি
বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত
করেছে।
সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না, অথচ একই অনুচ্ছেদের (২) ধারায় বলা হয়েছে: নারীদের সমান অধিকার থাকবে। রাষ্ট্র ও জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, তার সরকার নারী
নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে
এবং নীতিমালায় নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকা-ে সক্রিয় অংশগ্রহণ
নিশ্চিত করা এবং তাদের
ক্ষমতায়নের পথে সকল প্রতিবন্ধকতা
দূর করার ব্যবস্থা নেয়া
হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,
রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনী প্রভৃতি খাতে তাদের বর্ধিত
অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের
আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।
শেখ
হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ও
রাজনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অধিকতর
অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ
সমতার উন্নতি হয়েছে।
তিনি
বলেন, শান্তিরক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সহিংস উগ্রবাদ
প্রতিরোধে নারীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন,, আর্থ-সামাজিক ও
রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ
সমতার উন্নতি হয়েছে।
তিনি
বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সরকার প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশে
নারীরা এখন সরকারের সচিব,
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং অনেক
প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন
করছেন।
শেখ
হাসিনা বলেন, সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত
মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জেনে তিনি আনন্দিত।
তিনি
বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে
তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা তাদের দু:খ-দুর্দশা বুঝতে
পেরেছি। কারণ ১৯৭১ সালে
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একই
রকম অভিজ্ঞতা এবং ধাক্কা সহ্য
করতে হয়েছিল।’
তিনি
আশা করেন যে ইন্টারেক্টিভ
অধিবেশনটি যুদ্ধ এবং সংঘাতের শিকারদের
বুঝতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি দুর্দান্ত
অভিজ্ঞতা হবে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে
বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক
চালু হওয়া প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের
নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রধানের
বর্তমান চেয়ার হিসেবে সকলেই ডব্লিউপিএস এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যেকোন
যুদ্ধ-সংঘাত রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে উল্লেখ
করে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানান।
শেখ
হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ এবং
সংঘাতের ক্ষতি বুঝি। সে জন্য আমি
বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাই, দয়া করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামান। যেকোন সংঘাত সংলাপ, রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আমরা
যুদ্ধ চাই না। আমরা
চাই না কোন মানুষ
উদ্বাস্তু হোক। কারণ আমার
সব অভিজ্ঞতা আছে।’
অনুষ্ঠানে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ড. এ কে আব্দুল
মোমেনও বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত
বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুরুতে
নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক
একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। (বাসস)